ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা এবং কত সময় লাগে ২০২৪

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে, ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে, ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা এবং কত সময় লাগে

ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টাকে ইউটিউবার এবং বিভিন্ন মেন্টররা যত সহজ ভাবে উপস্থাপন করে আসলে বাস্তবে ততটা সহজ নয়। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রফেশনাল হতে এবং সফলতা অর্জন করতে ব্যাপক কষ্টের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হতে হয়। 

কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর সফল হতে পারলে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব, তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা হলে আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে স্কিল অর্জন করতে হবে এবং যে বিষয়ে কাজ করবেন সেই রিলেটেড যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। 

আর এখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন চলে আসে সেটি হল ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে এবং ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে? এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন কেননা আপনি যদি ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে না পারেন এবং ভালোভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিংয়ে টিকে থাকা অনেক মুশকিল।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে এবং ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে একটি আনুমানিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। 

তবে আর্টিকেলের শুরুতেই বলে দিচ্ছি এটা একটি জাস্ট আনুমানিক ধারণা, বাস্তবতার সাথে এর ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে এই আর্টিকেলে আমরা এই রিলেটেড আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে সহযোগিতা করবে বলে আশা করি। তাহলে চলুন অতিরিক্ত কথা না বলে আমাদের মূল আর্টিকেলে ফিরে আসি।

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে?

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে এক্সাট বলা সম্ভব নয়।
কেননা এটি অনেকগুলো বিষয়ের উপর ডিপেন্ড করে। এছাড়াও আপনার জানার আগ্রহ কতটুকু, আপনি কতটুকু পরিশ্রম করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন, আপনার নির্ধারিত স্কিল, শেখার প্রক্রিয়ার মত বিষয়গুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে। 

তবে আমরা একটি আনুমানিক ধারণা পেতে পারি যে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগতে পারে। তবে আমি আবারও বলতেছি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগবে এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর ডিপেন্ড করবে এবং আপনার চাহিদার উপর ডিপেন্ড করবে। 

আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন কোন টাকা পয়সা খরচ না করেই। আবার এমনও হতে পারে আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করলেন কিন্তু তবুও ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারলেন না। 

তবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে একজন বিগিনারের যেসব খরচ হতে পারে তার একটি সম্ভাব্য আউটলাইন নিচে দেয়া হলো;

১. কম্পিউটার/ল্যাপটপ: 

ল্যাপটপ বা পিসি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আবশ্যক একটি হাতিয়ার। এইজন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য অবশ্যই একটি ভাল মানের কম্পিউটার/ল্যাপটপ দরকার হয়। 

বিশেষ করে কয়েকটি সেক্টর রয়েছে, যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মত সেক্টরগুলোতে কাজ করার জন্য অবশ্যই হাই হাই পারফরম্যান্স যুক্ত ল্যাপটপ কিংবা পিসি থাকা অবশ্যক। 

কেননা এই সেক্টরগুলোতে অনেক ভারী কাজ করতে হয় যা ল্যাপটপের পারফরম্যান্সের অনেক প্রভাব রাখে। তবে আপনার পছন্দমত আপনি পিসি যাচাই করে ক্রয় করতে পারেন। 

মার্কেট বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, একটি স্বাভাবিক কিংবা হাই পারফরম্যান্স যুক্ত ল্যাপটপের কিংবা পিসির মূল্য আনুমানিক ৩০,০০০ - ১০০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। 

তবে এর থেকে কম দামে আপনি ল্যাপটপ কিংবা পিসি ক্রয় করতে পারেন আবার এর থেকে অনেক বেশি দামেও পিসি কিংবা ল্যাপটপ করতে পারেন। 

এছাড়াও আপনি চাইলে সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরনো ল্যাপটপ ও ব্যবহার করতে পারেন। তবে ফ্রিল্যান্সিং ভালোভাবে শিখে কাজ করতে হলে অবশ্যই একটি ভাল মানের পিসি কিংবা ল্যাপটপ অবশ্যই থাকা অপরিহার্য। 

২. প্রশিক্ষণ/কোর্স:

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট স্কিল থাকা বাধ্যতামূলক। স্কিল বা দক্ষতা বলতে বোঝানো হয় আপনি কোন যোগ্যতা কিংবা কোন টাইপের কাজে উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সার্ভিস প্রদান করবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং স্কিল এর উদাহরণ হল ওয়েব ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ইত্যাদি। 

স্কিল ডিভলপ করার সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে কোর্স করা। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য কোর্স/প্রশিক্ষণ নিতে হতে পারে। 

বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়ায় নতুন বা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাদের অবশ্যই কোনো একটি ভালো এবং কার্যকর কোর্সে যুক্ত হওয়া উচিত। 

ফ্রিল্যান্সিং কোর্সগুলো করার মাধ্যমে আপনি স্কিল ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক বিষয়গুলো ক্লিয়ার করতে পারবেন। কেননা ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই ভিত্তি মজবুত হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ, আর এই ভিত্তি মজবুত করার জন্য কোর্স করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোর্সগুলোকে দুই ভাবে করতে পারেন। 

প্রথমত অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করায় অর্থাৎ কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হয় যা ফ্রিল্যান্সিং শেখার সব থেকে কার্যকর স্টেপ বলে আমি মনে করি। 

অপরটি হল আপনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই অনলাইনে কোর্স করে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। যারা গ্রামগঞ্জে থাকেন কিংবা শহরে এসে কোর্স করার মত অবস্থান নেই তারা অনলাইনে কোর্স করতে পারেন। তবে অনেক সময় অনলাইন কোর্স করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

সব কোর্স করা উচিত নয়, কেননা বর্তমানে অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরা নিজস্ব উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য ভুলভাবে ফ্রিল্যান্সিংকে উপস্থাপন করতেছেন। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে স্কিল ডেভেলপমেন্ট পর্যন্ত তারা শেখায় না। শুধুমাত্র কোর্স সেল করে ইনকাম করার উদ্দেশ্যে অন্যদেরকে টার্গেট করে। 

যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা শুরু না করতেই ধোকার শিকার হয়ে এই সেক্টর থেকে বের হয়ে আসে। এইজন্য অনলাইন কোর্স নির্বাচন করার পূর্বে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য করে নিবেন।

ফ্রিল্যান্সিং কোর্স নির্বাচন করার পূর্বে বিবেচ্য বিষয় সমূহ

একটি ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য করে নিবেন।

১. কোর্সের বিষয়বস্তু ও কভারেজ: আপনি যেই কোর্সটি করতে চাচ্ছেন সেই কোর্সের মধ্যে আপনি যে বিষয় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান সেই বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে শেখানো হবে কিনা তা জেনে নিবেন। কোর্সের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে থেকে বা কোর্সের থেকে এখানে আলাদা কি কি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখবেন।

২. প্রশিক্ষকের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: আপনাকে যে প্রশিক্ষক দ্বারা কাজ শেখানো হবে সেই প্রশিক্ষকের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা কতটুকু তা যাচাই করা। তিনি কি কি ধরনের উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে তার একটি ধারণা নিবেন। তিনি কোন পদ্ধতিতে শেখান এবং কোন কোন বিষয়ের উপর বেশি জোর দেন সেটা জানা। আর কোন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে কোর্স করলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা যাচাই করা। 

৩. কোর্সে ব্যবহৃত টেকনোলজি ও প্রেজেন্টেশন: কোর্সটি কি আধুনিক টেকনোলজি এবং আপনাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করার। কেননা এখনো অনেক এরকম প্রতিষ্ঠান এবং কোর্স বিক্রেতা রয়েছে যারা পূর্বের টেকনোলজি এবং পূর্বের পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ শেখায় যা বর্তমানে গ্রহণযোগ্য নয়। 

৪. কোর্সের মূল্য: আপনি যেই কোর্সটি করতে চাচ্ছেন সেই কোর্সের মূল্য কেমন সেটা লক্ষ্য রাখা। সেম একই কোর্স অন্য প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য ব্যক্তিরা কিরূপ মূল্য গ্রহণ করতেছে তার একটি ধারণা রাখা। মূল্য অনুসারে যথাযথ স্কিল অর্জন করা সম্ভব কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। কেননা অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা অনেক বেশি পরিমাণে কোর্সের মূল্য রাখে কিন্তু তুলনামূলক কম শেখায় বা ভুল শেখায়। আবার এমনও দেখা যায় অনেক প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে এমন কিছু শেখায় যা আমরা ফ্রিতে ইউটিউবে শিখতে পারবো। 

৫. এক্সপার্টদের মতামত এবং রিভিউ: আপনি যেই সেক্টরে কাজ করতে চান সেই সেক্টরের বড় বড় এক্সপার্টদের কাছ থেকে সেই কোর্স বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মতামত নেয়ার চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কিরূপ ফলাফল পাচ্ছে তার একটি ধারণা রাখবেন। 

৬. কোর্সের গঠন: কোর্সের স্ট্রাকচার বা গঠন প্রয়োগিক দিক দিয়ে মজবুত হওয়া উচিত। শুধুমাত্র থিওরি নয়, প্রাক্টিস এবং প্রোজেক্ট ভিত্তিকও থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে বাস্তবে কিভাবে কাজ করতে হয় তার একটি আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায়। কোর্স করার পূর্ব অবশ্যই কোর্সের স্ট্রাকচার জন্য নিবেন।

৭. কোর্স সমাপ্তির পর সাপোর্ট: কোর্স শেষে প্রশিক্ষক কতটুকু সাপোর্ট দিবেন সেটা জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ফ্রিল্যান্সাররা যখন কাজ করতে চায় তখন তাদেরকে কিভাবে সাপোর্ট দিবে তা জেনে রাখা। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রাথমিকভাবে সাপোর্ট দেয়ার অঙ্গীকার করলেও পরবর্তীতে তারা ভালোভাবে সাপোর্ট প্রদান করে না। এজন্য অবশ্যই কোর্স করার পূর্বে এই বিষয়টা লক্ষ্য রাখবেন। 

৮. সার্টিফিকেশন ও স্বীকৃতি: আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে কোর্স করে সে ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠান দ্বারা আপনাকে সার্টিফিকেট ও স্বীকৃতি করবে কিনা তা পূর্বেই জেনে রাখা। 

সবমিলিয়ে কোর্স নির্বাচন করতে হলে সেটি যেন নির্ভরযোগ্য, সার্টিফাইড, মানসম্মত এবং আপনার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

তবে আনুমানিকভাবে দেখা যায় যে, একটি ভাল মানের কোর্স করার জন্য কমপক্ষে ১০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে এর থেকে আরো কম প্রাইসেও কোর্স করা সম্ভব আবার এর থেকে বেশি দামও লাগতে পারে।

প্রো টিপস: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোর্সগুলো অনেক সস্তায় ক্রয় করা সম্ভব যেগুলো ফেসবুকে খুব সহজে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় এই  কোর্সগুলো ফ্রিতে পাওয়া যায়। 

৩. সফটওয়্যার/টুল

ফ্রিল্যান্সিং শেখার ও অনুশীলন করার কাজে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এবং টুলস এর ব্যবহার করতে হয়। বিশেষ করে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে এই ধরনের বিভিন্ন টুলস ক্রয় করার প্রবণতা অনেক বেশি। 

বিভিন্ন সময় অনেক ধরনের সফটওয়্যার বা টুলস ব্যবহার করতে হয় যা অনেক কাজকে খুব সহজ করে তোলে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। 

তবে আপনাকে সবগুলো টুলস এবং সফটওয়্যার ক্রয় করতে হবে তা কিন্তু নয়, শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফটওয়্যার ও টুলস ক্রয় করতে হতে পারে যার খরচ ১,০০০ - ৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। 

কোন কোন ক্ষেত্রে এর বেশি হতে পারে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এর থেকে কম প্রাইসও করতে পারে, এটি ডিপেন্ড করবে আপনি কোন সেক্টরে কাজ করতেছেন তার ওপর। 

৪. ইন্টারনেট কানেকশন

অনলাইনে কাজ করার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আপনি যখন অনলাইনে কোর্স কিংবা বিভিন্ন কাজ শেখার সাথে সম্পর্কিত থাকবেন। 

আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারব যে অনেক সময় এমন হয় যে কাজ বা কোর্স করার সময় ইন্টারনেট কানেকশন ডিস্টার্ব দেয় যার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখা এবং শেখা হয় না। 

এছাড়াও ভালো ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া কাজ করা খুব একটা মজা লাগেনা। এই জন্য অবশ্যই একটি নির্ভরযোগ্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন হয়, যার মাসিক খরচ ৫০০ - ১,০০০ টাকার মধ্যে সাধারণত হয়ে থাকে। 

৫. অন্যান্য খরচ

আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড কাজ করতে যাবেন তখন আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্র্যাকটিস করতে হবে। আর প্র্যাকটিস করার জন্য আপনাকে অবশ্যই কখনো কখনো বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করতে হবে। 

উদাহরণস্বরূপ ডোমেইন, হোস্টিং, সেলফ মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ক্রিয়েশন, এডভারটাইজিং ইত্যাদি। এই ধরনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বিভিন্ন খরচ হতে পারে। 

এই ধরনের সরঞ্জামাদি খরচ সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কোন সেক্টরের উপর কাজ করতেছেন। তবে আনুমানিক ১,০০০ - ৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারে এই ধরনের খরচ গুলো।

সুতরাং, শুরুতে একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রায় ৫০০০ - ৫০০০০ টাকা খরচ করতে হতে পারে। তবে এটা সম্পূর্ণ একটি আনুমানিক ধারণা কখনো কখনো এর থেকে বেশি পরিমাণও খরচ হতে পারে আবার কখনো কখনো এর থেকে অনেক কম খরচ হতে পারে। 

আবার আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন। ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে আমরা সম্পূর্ণ ফ্রিতে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন সেই বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করব। 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে? 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে

ফ্রিল্যান্সিং তথাকথিত কোন কাজের মত নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার মধ্যে আবদ্ধ নেই। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কোন নির্দিষ্ট বাধা ধরা সময় নেই। আপনি চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেও ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন আবার চাইলে অনেকদিন যাবত ধরেও ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন। 

তবে ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে এবং ফ্রিল্যান্সিং এ কিভাবে কাজ করতে হয় সেটা শিখতে কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। 

তবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে তা আরো অনেকগুলো বিষয়ের উপর ডিপেন্ড করে। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতটা সময় লাগবে, সেটা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। যেমন:

১. আপনার টার্গেট স্কিল

আপনি কোন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে যাচ্ছেন অর্থাৎ আপনার টার্গেট স্কিল কোনটি সেটার উপর ডিপেন্ড করে কত সময় লাগতে পারে তা অনেক বেশি ডিপেন্ড করে। 

কেননা সব কাজ শিখতে সমান সময় লাগে না, কোন কাজ আছে যেগুলো খুব সহজেই শেখা যায় আবার অনেকগুলো কাজ আছে যেগুলো শিখতে অনেক সময় লাগে। 

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোন সহজ দক্ষতা যেমন- ডাটা এন্ট্রি, লিড জেনারেশন, কনটেন্ট রাইটিং, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট এর মত স্কিল গুলো নিয়ে কাজ করেন সেক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। খুব স্বাভাবিকভাবে 6 মাস থেকে 1 বছরের মধ্যেই অভিজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তবে আপনি যদি কোন হার্ড বা কঠিন স্কিল নিয়ে কাজ করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে এর থেকে অনেক বেশি পরিমাণে টাইম প্রয়োগ করতে হবে। 

যেমন- প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি থেকে শুরু করেন, তাহলে এই বিষয়গুলো শিখতে আপনাকে অনেক বেশি সময় লাগবে। 

এই স্কিল গুলোতে অভিজ্ঞ হওয়ার জন্য কমপক্ষে 1 থেকে 2 বছরের অধিক সময় ব্যয় করতে হয়। কখনো কখনো এর থেকে বেশি সময় লাগতে পারে। আর স্বাভাবিকভাবেই যে স্কিল গুলো যত কঠিন সেই স্কিলে আয় করা সম্ভবনা তত বেশি। 

সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে তার অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হল আপনার টার্গেট স্কিল। আপনার টার্গেট স্কিল যত সহজ হবে তত তাড়াতাড়ি শিখতে পারবেন এবং আপনার টার্গেট স্কিল যত কঠিন হবে তত বেশি সময় লাগবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে। 

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর সব থেকে ডিমান্ডেবল সেক্টর কোনটি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

২. আপনার পূর্ব এক্সপেরিয়েন্স

আপনি যদি এমন কোন স্কিল নিয়ে কাজ করেন যেই স্কিলে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে সেক্ষেত্রে আপনি দ্রুত ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। আর আপনার যদি কোন প্রকার পূর্বের অভিজ্ঞতা বা এক্সপেরিয়েন্স না থাকে সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে একটি কাজ শিখতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগবে। 

ধরে নেন আমি একটি বিষয়ের উপর কাজ জানি সেক্ষেত্রে ওই কাজটি করার আমার জন্য সহজ হবে, আর আমি যদি একটি কাজ না পারি সেক্ষেত্রে আমার অধিক সময় প্রয়োজন হবে এটা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। 

অর্থাৎ এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে তার অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে যে স্কিলের উপর ক্যারিয়ার গড়তে চান সেই স্কিলের উপর আপনার পূর্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা। 

২. প্রশিক্ষণের ধরন

আপনি যদি ফুল-টাইম কোন কোর্স বা বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সেখানে প্রায় ৬-৮ মাসের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল অর্জন করতে পারবেন। এবং মৌলিক বিষয়গুলো ক্লিয়ার করতে পারবেন। 

অন্যদিকে যদি পার্ট-টাইম হিসেবে অনলাইন কোর্স করেন, তাহলে সেটি আরও বেশি সময় নিবে। এছাড়াও আপনি যদি কোর্স করেন সেক্ষেত্রে কোর্সের বিষয়বস্তু অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগতে পারে তার ওপর। 

আর আপনি যদি নিজে নিজে ইউটিউব কিংবা বিভিন্ন ফ্রি মাধ্যম ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান সে ক্ষেত্রে তুলনামূলক একটু টাইম লাগবে তবে ভালো করে শিখতে পারবেন। 

৩. সেলফ লার্নিং

আপনি যদি নিজের চেষ্টায় ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান, তাহলে সেটি আরও বেশি সময় নিতে পারে। কারণ তখন আপনাকে অনেক বেশি পরিমাণে রিসার্চ করতে হবে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত সিলেবাস বা লার্নিং মডিউল বানাতে হবে এবং নিজের শেখার স্পিডকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

এক্ষেত্রে ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগতে পারে বা এর বেশি সময় লাগতে পারে। সেলফ লার্নিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি পরিমাণে রিসার্চ করতে হবে নানা জায়গা থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং ভালো মন্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। 

এক্ষেত্রে আপনি যদি নিজে নিজে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান আর এমন কোন সেক্টরকে নির্বাচন করেন যা তুলনামূলক শেখা কঠিন সে ক্ষেত্রে আরও অধিক সময় লাগতে পারে স্পেশালি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মতো সেক্টর গুলো। 

৪. প্রাকটিস অ্যান্ড প্র্যাকটিস

শুধুমাত্র থিওরি শেখা যথেষ্ট নয়, প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন করার সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ভালোভাবে প্র্যাকটিস করবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন না। 

প্রাথমিকভাবে আপনি যখন প্রথম কয়েকটি প্রোজেক্ট করতে যাবেন স্বাভাবিকভাবে একটু সময় বেশি লাগবে। 

কিন্তু ধীরে ধীরে প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে যখন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হবে তখন আপনি কত তাড়াতাড়ি কাজগুলোকে সম্পূর্ণ করতে পারবেন। 

আপনি যদি শুধুমাত্র ইউটিউব কিংবা কোর্সের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং দেখে শেখার চেষ্টা করেন সে ক্ষেত্রে আপনার বোকামি হবে। ফ্রিল্যান্সিং তখনই ভালোভাবে শিখতে পারবেন যখন আপনি নিজেই প্র্যাকটিস করবেন। 

সব সময় প্রাকটিসের মধ্যে থাকবেন তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার সুযোগ এবং দুর্বলতা কোন জায়গা গুলোতে। আর আপনি যত বেশি পরিমাণে প্র্যাকটিস করবেন তত তাড়াতাড়ি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। 

আপনি যেই জিনিস নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান না কেন অবশ্যই আপনাকে ডেইলি কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিংকে যদি আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান সে ক্ষেত্রে দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হবে, প্রয়োজনে এর বেশি সময় ব্যয় করতে হবে।

আর যত বেশি সময় ধরে আপনি প্র্যাকটিস করবেন তত তাড়াতাড়ি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। মনে রাখবেন, practice make a man perfect.

সুতরাং, উপরের সবগুলো বিষয়ে একত্র করলে দেখতে পারি যে, আপনার টার্গেটেড সেক্টর, লার্নিং মেথড, প্রিভিয়াস এক্সপেরিয়েন্স এবং প্র্যাকটিসের উপর ডিপেন্ড করে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে প্রায় ৬ মাস থেকে ২ বছরের মতো সময় লাগতে পারে। 

এই সময় শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং ভালো হবে শেখা যায় এবং বেসিক জিনিস গুলো ক্লিয়ার হওয়া যায়। কিন্তু এক্সপার্ট হতে হলে অনেক বছর প্রচেষ্টা করতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে। 

সত্যি বলতে ফ্রিল্যান্সিং একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং আপনাকে টিকে থাকার জন্য সব সময় নতুন কিছু শিখতে হবে।

ফ্রিলান্সার হওয়ার জন্য কী কোর্স আবশ্যক?

একজন ভালো মানের ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য কোর্স করা কখনোই আবশ্যক নয়। আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতেই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। 

তবে ফ্রিলান্সিং এর ক্ষেত্র অনুযায়ী কোর্স করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মেশিন লার্নিং, ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে আমার মতে কোর্স করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। 

কেননা এই সেক্টরগুলোতে তুলনামূলক ডিফিকাল্টি অনেক বেশি। তবে আপনি চাইলে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং সম্পূর্ণ ফ্রিতে শিখতে পারবেন। তবে সাধারণ ফ্রিলান্সিং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও কোর্স করা ভালো কিন্তু আবশ্যক নয়।

ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য অনলাইন কোর্স করলে কি হবে?

জি অবশ্যই, আপনি চাইলে অনলাইন কোর্স করেও ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। আমার মতে, অনলাইন কোর্স করলে বেশ সুবিধা পাওয়া যায়। 

অনলাইন কোর্স করলে যে কোন স্থান থেকেই ক্লাশ করা সম্ভব এছাড়াও নিজের সময় ও গতিতে শিখতে পারবেন। এছাড়াও এর পাশাপাশি প্র্যাকটিস এবং প্রোজেক্টের সুযোগও রয়েছে অনেক। 

বর্তমানে অনেক মানসম্মত অনলাইন কোর্স পাওয়া যায় সেগুলো নির্বাচন করে আপনি অনলাইনে ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। 

তবে মাথায় রাখবেন অনলাইনে কিন্তু সব থেকে বেশি প্রতারণার শিকার হতে হয়, এজন্য কোর্স নির্ধারণের সময় যে বিষয়গুলো আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে নিবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা ও সময় লাগে এর কিছু গবেষণা, পরিসংখ্যান

ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড আমরা অনেকগুলো গ্রুপের এডমিনের সাথে এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত। এজন্য এই আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে আমরা কিছু পরিসংখ্যান এবং গবেষণা সংগ্রহ করেছি। যা আপনাকে এই বিষয়টা বুঝতে আরো সহজ করবে। 

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকটি গবেষণা এবং পরিসংখ্যান আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি এজন্য কিছু ভুল ত্রুটি থাকতে পারে সেটা অসংগতিপূর্ণ নয়। 

তবে আমরা প্রায় ১৫ টি ফ্রিল্যান্সিং আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে এবং প্রায় ৭০০ জন  সফল ফ্রিল্যান্সারের কাছে একটি জরিপ থেকে এই প্রতিবেদনটা তৈরি করতেছি। 

আইটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পাওয়া জরিপের কিছু মন্তব্য

১. আমরা যে ফ্রিল্যান্সিং আইটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি, আনুমানিক তাদের সবার ভাষ্যমতে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কমপক্ষে একজন ফ্রিল্যান্সারের ৬ মাসের মতো সময় লাগে। এই ছয় মাসের মধ্যে যা শিখে সেগুলো দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রবেশ করার মত যোগ্যতা অর্জন হয়। এবং তাদের কথাতে আরো প্রকাশ পায় যে, ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র বেসিক জ্ঞানটুকু দেয় এবং এর পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় সাপোর্ট প্রদান করে। যেন একজন ফ্রিল্যান্সার বেসিক এবং কিছুটা এডভান্স লেভেলে কাজ করতে পারে কিন্তু যদি নিজেকেই এক্সপার্ট গড়ে তুলতে চায় তাহলে তাদের নিজেকেই প্রশিক্ষিত করতে হয়। 

২. ফ্রিল্যান্সিং আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কোর্সের জন্য বিভিন্ন রকম প্রাইস রেখে দেয়। এর মধ্যে আমরা দশটি প্রতিষ্ঠানকে এমন পেয়েছি যারা ১০ হাজারের মধ্যেই তাদের বেশিরভাগ কোর্সের প্রাইস রাখে। আর আমরা আরো কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে ভিজিট করে এবং তাদের সাথে কথা বলার পর কিছুটা একই তথ্য পেয়েছি। মানে, ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে গেলে কমপক্ষে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে আপনাকে রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু কোর্স রয়েছে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং লিড জেনারেশন এই ধরনের কোর্সগুলো দাম সব থেকে কম হয়। অপরদিকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর খোঁজগুলোর প্রাইস তুলনামূলক বেশি হয়।

ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষ থেকে পাওয়া জরিপের কিছু মতামত

১. আমরা ৭০০ জন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে যে দুইটি জরিপটি পরিচালনা করি তার মধ্যে একটি জরিপ ছিল কিছুটা এরকম।

আপনার মতে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে?

  1. ৩ থেকে ৬ মাস
  2. ৬ মাস থেকে ১ বছর
  3. ১ থেকে ২ বছর

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য প্রায় ৭৩% ফ্রিল্যান্সারে তিন নম্বর অপশন অর্থাৎ ১ থেকে ২ বছরকে নির্বাচন করেছে। প্রায় ১৯% ফ্রিল্যান্সার দুই নাম্বার অপশন অর্থাৎ ৬ মাস থেকে ১ বছরকে নির্বাচন করেছে। আর অবশিষ্ট ৮% ফ্রিল্যান্সার ৩ থেকে ৬ মাস কে নির্বাচন করেছে।

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে

এই ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করব না পরিসংখ্যানটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে কত সময় আনুমানিক প্রয়োজন।

২. আর দ্বিতীয় জরিপের মধ্যে আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে চাই যে তারা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা ব্যয় করেছেন। জরিপটি নিচের এর মত ছিল;

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে

আপনার ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লেগেছে?

  1. শূন্য
  2. ১০ হাজারের কম
  3. ১৫ হাজার
  4. ১৫ হাজারের অধিক

স্বাভাবিকভাবে ই আমাদের ধারণা ছিল তবুও এতটুকু ক্লিয়ার হয়েছে প্রায় ৫৪% ব্যক্তি দুই নম্বর অপশন অর্থাৎ ১০ হাজারের কম টাকায় ফ্রিল্যান্সিং শিখেছে। 

প্রায় ১২% ফ্রিল্যান্সার তাদের ভাষ্যমতে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং শিখেছে কোনো প্রকার টাকা পয়সা খরচ না করে। 

প্রায় ২৯% ফ্রিল্যান্সার ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি ব্যয় করেছে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে। আর অবশিষ্ট ৫% ১৫ হাজারের অতিরিক্ত টাকায় ফ্রিল্যান্সিং শিখেছে। 

যাইহোক, এখান থেকে আমরা বাংলাদেশের বর্তমান ফ্রিল্যান্সিং এর অবস্থা এর কিছু আনুমানিক ধারণা পাই। 

তবে এটা শুধুমাত্র ৭০০ জনের মধ্যে পরিচালিত পরিসংখ্যান। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় সাড়ে দশ লাখের উপরে। সুতরাং একটি ছোট পরিসংখ্যান দিয়ে সম্পূর্ণ সেক্টরটাকে নির্ধারণ করা উচিত নয় তবে আমরা একটি আনুমানিক ধারণা পেতে পারি। 

আমার পার্সোনাল অভিজ্ঞতা

আলহামদুলিল্লাহ, আমিও 2017 সালের দিকে ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে যুক্ত হই। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকেই আমি ব্লগিংয়ের সাথে যুক্ত ছিলাম এখান থেকেই আমার ফ্রিল্যান্সিং এর বেসিকটা শেখা হয়েছিল। আমি শুধুমাত্র ইউটিউবের উপর ডিপেন্ড করে এবং নিজের নিজস্ব মেধাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখেছি। 

কোন প্রকার কোর্সের উপর ডিপেন্ড না করে বিভিন্ন বড় ভাইদেরকে সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য নিয়েছি। বলতে গেলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে আমি ফ্রিল্যান্সিং শিখেছি এবং আজকে যে কন্টেন্ট টা দেখতেছেন এটা আমি নিজে নিজে লেখা শিখেছিলাম। 

আর ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আমাকে প্রায় ২ থেকে ৩ মাস লেগেছে কারণ আমি আগে থেকেই অনলাইন সম্পর্কে অনেক জ্ঞান রাখতাম যার কারণে আমার কাছে বিষয়গুলো অনেকটাই ক্লিয়ার ছিল। 

আর আমি বর্তমানে কন্টেন্ট রাইটিং এন্ড এসইও এর উপর সার্ভিস প্রদান করে থাকি। 

সুতরাং আমি যেহেতু পেরেছি আশা করি আপনারাও ফ্রিতেই সম্পূর্ণ শিখতে পারবেন। আর বর্তমানে টেকনোলজি আরো উন্নত হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যক্তিরা ইউটিউবে আরো নতুন নতুন কোর্স প্রদান করতেছে আপনারা চাইলে সেখান থেকেই ফ্রি কোর্স করতে পারেন। 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

ফ্রিল্যান্সিং অনলাইন কোর্স করতে কত টাকা খরচ হবে?

অনলাইন কোর্সের খরচ বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও কোর্সের উপর নির্ভর করে। সচরাচর ১০০ থেকে ৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে একটি ভালো কোর্স করার জন্য। তবে কিছু মানসম্মত প্লাটফর্মের কোর্সের খরচ ১০,০০০ টাকারও বেশি হতে পারে।

কোর্স না করে ফ্রিল্যান্সিং শেখা সম্ভব কি?

হ্যাঁ, অনেকে নিজে থেকেই অনলাইন টিউটোরিয়াল, ফ্রি কোর্স এবং নিয়মিত প্র্যাকটিসের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং শিখতে পারেন। তবে কোর্স করলে ধারাবাহিক ও গভীর বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা সহজ হয়।

সরকারিভাবে বিনামূল্যে কোনো ফ্রিল্যান্সিং কোর্স আছে কি?

হ্যাঁ, কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ফ্রিলান্সিং নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

১০ মিনিট স্কুলের কোর্স করে কি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা সম্ভব?

না, ১০ মিনিট স্কুলের মতো ছোট কোর্স দিয়ে ফ্রিলান্সিং শুরু করা সম্ভব নয়। এতে শুধু মৌলিক ধারণা দেওয়া হয় আমার জানামতে। প্রফেশনালিজম অর্জনের জন্য আরো অনেক ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং এর স্কিল ডেভেলপ করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য কোন পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হবে?

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনি যে কোন পর্যায়ে পড়ালেখা করেন তাতে কোন যায় আসে না। তবে অবশ্যই ইংরেজিতে কমিউনিকেশন স্কুল থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্লায়েন্ট কি বলতে চাচ্ছে এবং কি বোঝাতে চাচ্ছে এতোটুকু বোঝার মত ক্ষমতা এবং জবাব দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। এখানে হাই এডুকেশন এর কোন প্রয়োজন নেই।

উপসংহার

ফ্রিল্যান্সিং শিখার জন্য কত সময় লাগতে পারে তার আমরা একটি আনুমানিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি সম্পূর্ণ বিগিনার হয়ে থাকেন তাহলে কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিং শেখার কাজে নিয়োজিত থাকতে পারেন। এবং কাজ করার সাথে সাথেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনাকে কত সময় লাগতে পারে।

আর অপরের দিকে বর্তমানে সময় ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে তা ডিপেন্ড করা অনেকগুলো বিষয়ের উপর। তবে আনুমানিক ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি রাখতে পারি বলে আমি মনে করি। যা আমরা পরিসংখ্যানে ভালোভাবে দেখিয়েছি। 

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা ফ্রিল্যান্সিং করতে কত টাকা এবং কত সময় লাগে তার উপর একটি আনুমানিক ধারণা পেয়েছেন। 

তবে মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ফিল্ড অনেক বড় আপনি যত শিখবেন, তত বেশি পরিমাণে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে শেখার শেষ নেই বললেই চলে। 

কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের যেকোনো নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর স্কিল অর্জন করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই সেই বিষয়ের উপর ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। 

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের অল্প হলেও সহায়তা করবে নতুন কিছু শিখতে। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো জানতে চান তাহলে আমাদের ফ্রিল্যান্সিং ক্যাটাগরিটি ভিজিট করতে পারেন তাহলে অনেক কিছু আরও শিখতে পারবেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url