ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ২০২৪

 

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি?
একজন ফ্রিল্যান্সার যখন অনেক কষ্ট করে তার কাজগুলো সম্পন্ন করে তখন সে ডলারে পেমেন্ট পায়। এখন সেই পেমেন্ট গুলো নিজের হাতে আনা পর্যন্ত অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফ্রিল্যান্সিং এর উপার্জিত টাকা পাওয়ার সব থেকে জনপ্রিয় উপায় গুলো কি কি সেটা সম্পর্কে অনেকজনই অজানা। মূলত এই প্রবলেমটা নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সব থেকে বেশি সম্মুখীন হতে হয়। 

এইজন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি এই সম্পর্কে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এভারেজে কত টাকা আয় করে একজন ফ্রিল্যান্সার, বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কোনটি এবং আরো অতিরিক্ত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। 

সুতরাং আপনারা যারা এই বিষয়গুলো জানতে আগ্রহী তারা এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটা পড়ার চেষ্টা করবেন। আমি প্রত্যেকটি বিষয়কে ক্লিয়ার করব যেন আপনাদের ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা হাতে আনতে আর কোন সমস্যা না হয় না। 

তাহলে চলো না অতিরিক্ত কথা না বলে আমাদের মূল আর্টিকেল শুরু করি। 

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি?

বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং টাকা পাওয়ার মাধ্যম হল Payoneer। এটি একটি আন্তর্জাতিকইন্টারন্যাশনল পেমেন্ট মাধ্যম, যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা পাওয়ার জন্য একটি সহজ এবং সুবিধাজনক মাধ্যম। এছাড়াও Payoneer এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা PayPal, Skrill, Webmoney, Amazon Pay এবং আরও অনেক জনপ্রিয় পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে টাকা পাঠাতে পারে।

Payoneer এর পাশাপাশি, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা Skrill এবং PayPal এর মাধ্যমেও বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণ এবং প্রেরণ করতে পারবে। তবে Payoneer এর তুলনায় এই দুই মাধ্যমটিতে কিছু অসুবিধা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, PayPal   বাংলাদেশের অফিসিয়াল ভাবে অনুমোদিত নয়, যার কারণে বিভিন্ন সময় পেপাল ব্যবহারকারীদের কে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। 

যারা বর্তমানে পেপাল ব্যবহার করে তারা মূলত বিজনেস একাউন্ট কিংবা আনঅফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যা যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সহজে বলতে গেলে রিক্স নিয়ে পেপাল একাউন্ট ব্যবহার করতে হয়। 

আর Skrill মূলত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড খুব একটা পরিচিত নয়। যার কারণে স্ক্রিল ব্যবহার করেও অনেক সময় সমস্যায় করতে হয়। তবে স্ক্রিল বাংলাদেশের অফিসিয়াল ভাবে ব্যবহার উপযোগী।

2023 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের লাস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী , বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং টাকা পাওয়ার মাধ্যমগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল:

  •  Payoneer
  •  PayPal
  •  Wise
  •  Bank Deposit 
  •  Skrill
  •  Webmoney

এই পেমেন্ট মেথডগুলোর মধ্যে, Payoneer সবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ Payoneer এর তুলনামূলক বেশি সুবিধা এবং ফিচারের দিক থেকে। Payoneer এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা গ্রহণ করতে পারে এবং এটি বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করতে পারে। 

এছাড়াও Payoneer একটি ক্রেডিট কার্ড ফ্রিল্যান্সারদের প্রদান করে যার মাধ্যমে তারা যেকোনো প্রকার পেমেন্ট গ্রহণ এবং প্রদান করতে পারে। 

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা ওঠানোর জন্য বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ভালো হবে?

ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা উঠানোর জন্য বাংলাদেশে অনেক ভালো মানের ব্যাংক রয়েছে যারা বর্তমান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করতেছে। তবে বাংলাদেশে সব ব্যাংক সমান সুবিধা প্রদান করে না। আমি এখানে কিছু সেরা এবং সুবিধাসম্পন্ন কয়েকটি ব্যাংকের নাম বলবো যা আপনারা চাইলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকা উত্তোলনের জন্য এই ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করতে পারেন। 

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা ওঠানোর জন্য বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ভালো হবে তা নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর, যেমন:

  1.  ব্যাংকের লেনদেন চার্জ
  2.  ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস 
  3.  ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ও অবস্থান
  4.  ব্যাংকের নিরাপত্তা  
  5.  ব্যাংকের সুবিধা সমূহ 

মূলত এই ধরনের বিষয়গুলোকে লক্ষ্য রেখে একটি ব্যাংক নির্বাচন করা উচিত। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা ব্যাংক গুলো রয়েছে। তাদের মধ্যে সেরা কয়েকটি ব্যাংক হল: 

  •  ডাচ-বাংলা ব্যাংক
  •  ইসলামী ব্যাংক
  •  ব্যাংক এশিয়া
  •  সিটি ব্যাংক
  •  ব্র্যাক ব্যাংক

এই পাঁচটি ব্যাংক মূলত প্রত্যেকটি ফ্রিল্যান্সারের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় সুবিধা ও সুযোগ প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে ডাচ বাংলা ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ সেবা প্রদান করে থাকে এবং লেনদেন চার্জ তুলনামূলক অনেক ব্যাংকের থেকে কম। এর পাশাপাশি যারা ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক তাদের লেনদেন করতে চায় এবং ব্যাংকিং সার্ভিস গ্রহণ করতে চায় তারা অবশ্যই ইসলামী ব্যাংক এর মাধ্যমে এসব কাজ করতে পারবে। 

এর পাশাপাশি ব্যাংক এশিয়া অনেক জনপ্রিয় একটি ব্যাংক বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। তুলনামূলক সুবিধা এবং টাকা গ্রহণ এবং বিদেশে টাকা পাঠানো সহ international ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে। 

এছাড়াও এর পাশাপাশি সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং তারা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে ব্র্যাক ব্যাংক তাদের বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি payoneer এর সাথে সংযুক্ত করে টাকা লেনদেন করার সুযোগ দেয়। 

মূলত আপনার জন্য কোন ব্যাংক টি সবথেকে ভালো হবে তা নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং পছন্দের উপর। আপনি যদি ওপরের ব্যাংকগুলোর মধ্যে যে কোন একটি ব্যাংক সিলেক্ট করে কাজ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভালো হয়। 

এছাড়াও উপরের ব্যাংকগুলোর তুলনামূলক লেনদেন চার্জ খুব কম। এছাড়াও বিদেশ থেকে যেকোনো সময় টাকা একসেপ্ট করতে পারবেন এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।  আর আপনাদের মধ্যে যারা ইসলামী শরীয়া মোতাবেক লেনদেন এবং টাকা গ্রহণ করতে চান তারা অবশ্যই ইসলামী ব্যাংক ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। 

আপনি সমস্ত ব্যাংকগুলোর সুবিধা ও অসুবিধা পর্যালোচনা করার পরেই একটি সঠিক ব্যাংক সিলেক্ট করবেন আপনার জন্য। 

বর্তমানে ইনকামের জন্য জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কোনটি?

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হল Upwork। Upwork হল একটি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা খুব সহজে এই বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারে এবং আপনার কাজ শুরু করে দিতে পারেন। 

মূলত Upwork অনেক জনপ্রিয় বিভিন্ন কারণ থেকেই। অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো থেকে অনেক বেশি পরিমাণ কাজ পাওয়া যায় Upwork মার্কেটপ্লেস থেকে। 

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে এই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস টির। Upwork এ প্রায় সকল ধরণের কাজ পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ডেভেলপমেন্ট: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।
  • ডিজাইন: ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।
  • কন্টেন্ট: কনটেন্ট রাইটিং, ট্রান্সলেট, কপিরাইটিং ইত্যাদি। 
  • মার্কেটিং: মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ইত্যাদি।

Upwork এ  ফ্রিল্যান্সার রা তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কমিউনিকেশন স্কিল এর উপর ভিত্তি করে মূলত কাজ পেয়ে থাকে। Upwork এ ইনকাম করার জন্য অবশ্যই একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। যা খুব সহজেই তৈরি করতে পারবেন। অবশ্যই আপনার প্রোফাইল কে যত আপনি অপটিমাইজ করবেন, কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। আর Upwork এ তুলনামূলক কম একাউন্ট ব্যান হয় যার কারণে একটি দীর্ঘমেয়াদী ইনকামের সম্ভাবনা থাকে।

Upwork এর জনপ্রিয়তার কিছু অন্যতম কারণ কি

Upwork এর জনপ্রিয়তার কিছু অন্যতম কারণ হল:

১. বিশাল কাজের সুযোগ: Upwork এ তার সব ধরনের অনলাইন ভিত্তিক কাজ পাওয়া যায়, যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের দক্ষতা এবং আগ্রহের সাথে মিলিত কাজ খুঁজে পেতে পারেন। এছাড়াও এই মার্কেটপ্লেস রয়েছে বিশাল সংখ্যক ক্লাইন্ট যার কারণে upwork সবার থেকে পপুলার আজকে।

২. বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম: Upwork একটি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস, যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারেন। ঘরে বসেই বিশ্বের সব প্রান্তে কাজ করা সম্ভব। 

৩. ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ: Upwork এ ফ্রিল্যান্সাররা তাদের ক্লায়েন্টের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগ রয়েছে। যার ফলে কাজের উপর আরও ভালোভাবে জানার জন্য এবং ক্লায়েন্টের সাথে একটি সুন্দর কমিউনিকেশন করার জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যা দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কমিউনিকেশন স্কিল অর্জনে অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে।

Upwork এর বিকল্প 

Upwork ছাড়াও, বর্তমানে আরো অনেক ধরনের জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল:

  1.  Fiverr
  2.  Freelancer
  3.  Guru
  4.  Toptal
  5.  PeoplePerHour
  6.  99designs
  7.  Guru

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন। আমি এই বিষয়গুলোকে ভালোভাবে ক্লিয়ার করেছি।

সর্বোপরি বলতে চাই যে আপনি আপনার স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স উপর ভিত্তি করে যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যুক্ত হতে পারেন। তবে বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসগুলো নিয়ে কাজ করলে খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। 

আমি পার্সোনালি ফাইভার, upwork, ফ্রিল্যান্সার ডটকম এর মত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোকে রিকমেন্ড করে থাকি।

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়

ফ্রিল্যান্সিং করে মূলত কত টাকা আয় করা যায় সেটা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। যেমন

১. স্কিল: একজন ফ্রিল্যান্সারের যত বেশি পরিমাণে স্কিল থাকবে, সেই ফ্রিল্যান্সার ততো বেশি পরিমাণে ইনকাম করতে সক্ষম হবে। ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে হলে যেকোনো একটি বিষয়ের উপর পারফেক্ট স্কিল থাকতে হয়। 

২. এক্সপেরিয়েন্স: একজন ফ্রিল্যান্সার যত বেশি সময় ধরে কাজ করবে এবং তার experience গ্রো করবে এবং সেই ফ্রিল্যান্সারের ইনকামের সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া যখন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর অনেক দিন যাবত কাজ করা হয় তখন এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি স্কিল কমিউনিকেশন এবং কাজের ধরনের উন্নতি হয়। যা একজন ফ্রিল্যান্সার তাদের ইনকাম বৃদ্ধিতে যথাযথভাবে সাহায্য করে।

৩. কাজের ধরন: বর্তমানে অনলাইনে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেই কাজগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। মূলত সেই কাজ করলে বেশি ইনকাম করা সম্ভব। মূলত সব ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কাজের মূল্য এক রকম হয় না, একজন ওয়েব ডিভলপারের ইনকাম একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের থেকে অনেক গুণ বেশি হয়। কারণ বর্তমানে ওয়েব ডিভলপারের চাহিদা বেশি এজন্য এই কাজের ইনকাম বেশি।

৪. ক্লায়েন্ট এর পরিমাণ: মূলত ফ্রিল্যান্সারদের ইনকামের একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ বা কমিউনিকেশন। একজন ফ্রিল্যান্সার যখন ক্লায়েন্টের মন মোতাবেক কাজ করে দেয় তখন সে তার প্রাপ্য ইনকাম পায় এর পাশাপাশি ক্লাইন্ট অনেক সময় টিপস দিয়ে থাকে। যা আরো ইনকাম দিতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও পজেটিভ রিভিউ ক্লায়েন্ট বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ইনকাম করতে সাহায্য করে। একজন ফ্রিল্যান্সারের যত বেশি ক্লায়েন্ট পরিচিত থাকবে সেই ফ্রিল্যান্সারের ইনকাম তত বেশি হবে।

তবে বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করে এটা বলা খুবই মুশকিল। তবে অনলাইন রিপোর্ট অনুযায়ী একজন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার মাসে বাংলাদেশী টাকা হিসেবে 50 হাজার থেকে 5 লক্ষ টাকা আয় করে থাকে। তবে একজন ফ্রিল্যান্সারে ইনকাম নির্দিষ্ট করে বলা খুবই আগ্রহণযোগ্য হবে। একজন ফ্রিল্যান্সার তার এক্সপেরিয়েন্স, স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল, কাজের ধরন, ক্লায়েন্ট এর পরিমাণ সহ আরো অনেক বিষয়ের উপর ডিপেন্ড করে তার ইনকাম করে। 

বর্তমানে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটার, এসইও, ইমেইল মার্কেটিং, facebook advertising, google advertising সেক্টর গুলোতে কাজ করা ফ্রিল্যান্সারের ইনকাম তুলনামূলক অনেক বেশি হয়। 

এছাড়াও আপওয়ার্ক এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মাসে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে এক্সপেরিয়েন্স এবং স্কিল ভেদে। যাই হোক বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা অন্যান্য অনেক দেশের ফ্রিল্যান্সারের থেকে বেশি পরিমাণে ইনকাম করে থাকেন। মূলত এই মুহূর্তে যে পরিমাণ একজন ফ্রিল্যান্সার ইনকাম করে থাকে তা বৃদ্ধি করা সম্ভব শুধুমাত্র এক্সপেরিয়েন্স ও স্কিল এর মাধ্যমে। 

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তাদের আয়ের উপর শতকরা কত শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে?

বাংলাদেশ সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তাদের আয়ের উপর ৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রণোদনা বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস অথবা বিদেশি যেকোনো ক্লায়েন্টের এর মাধ্যমে আয় করলে তাহলেই প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে। 

মূলত এই প্রণোদনাটি ফ্রিল্যান্সারদের পেতে হলে তাদেরকে কিছু শর্ত পালন করতে হবে। তবে একজন ফ্রিল্যান্সার সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য হবে বলে জানিয়েছে সরকার। 

প্রণোদনা পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের নিচের দেয়া শর্তাবলী পূরণ করতে হবে:

  • উক্ত ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
  • ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই বিদেশি যে কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বা কোম্পানি বা ব্যক্তির কাছ থেকে এই অর্থ পেতে হবে।
  • ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই তার আয়ের উপর প্রণোদনার জন্য আবেদন করতে হবে।
  • ফ্রিল্যান্সারের ইনকাম অবশ্যই বিদেশ থেকে আসতে হবে।
  • প্রণোদনার পরিমাণ হবে ফ্রিল্যান্সারের মোট আয়ের উপর ৪ শতাংশ।
  • ফ্রিল্যান্সার সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য হবে
  • ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারদের ওপর বাংলাদেশ সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। এখন একজন ফ্রিল্যান্সার চাইলে তার ইনকাম এর ওপর প্রণোদনা পেতে পারে। তবে এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত প্রদান করেছে। প্রণোদনা পাওয়ার জন্য অবশ্যই এই শর্তগুলো পালন করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে টাকা আনতে হবে। 

বাংলাদেশ থেকে freelancer.com-এর টাকা তোলার উপায় কী?

ফ্রিল্যান্সার ডটকম একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস, যেখানে প্রায় লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং করতেছে। বর্তমানে নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সার ডটকম একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। কিন্তু অনেক প্রশ্ন করে থাকে যে বাংলাদেশ থেকে freelancer.com-এর টাকা তোলার সহজ উপায় কি? 

বাংলাদেশ থেকে freelancer.com-এর টাকা তোলার দুটি উপায় রয়েছে:

১. সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার বা ডিপোজিট করা।

২. Payoneer বা Skrill-এর মতো একটি পেমেন্ট সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা তোলা।

সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ডিপোজিট করা

ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মাধ্যমে আপনি যদি সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা ডিপোজিট বা ট্রান্সফার করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একটি বাংলাদেশের স্বীকৃত যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

 Freelancer.com থেকে টাকা পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের কে অবশ্যই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস প্রদান করে টাকা একাউন্টে নিয়ে আসতে হবে। আপনি ফ্রিল্যান্সার ডট কমে লগইন করে সেখান থেকে একাউন্ট অপশনে চলে যাবেন।

এরপর পেমেন্ট অপশন এ ক্লিক করার পর আপনার ব্যাংকের ডিটেলস প্রদান করে, সেখান থেকে সরাসরি আপনার অর্জিত অর্থগুলো আপনার ব্যাংক একাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। 

তবে ফ্রিল্যান্সার ডটকম কখনো কখনো ব্যাংক একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য কিছু সময় গ্রহণ করে। একবার আপনার অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে গেলে আপনাকে সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিবে।

Payoneer বা Skrill-এর মাধ্যমে টাকা তোলা

এক্ষেত্রে আপনি যদি Payoneer বা Skrill এর মত পেমেন্ট অপশন থেকে আপনার উত্তোলন করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই উক্ত পেমেন্ট সিস্টেমে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আর যদি একাউন্ট না থাকে সেক্ষেত্রে খুব সহজেই একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন। 

Payoneer বা Skrill এর মাধ্যমে টাকা তোলার জন্য অবশ্যই আপনাকে তাদের প্রসিডিউর ফলো করতে হবে। ফ্রিল্যান্সার ডটকম থেকে Payoneer বা Skrill এ টাকা পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনার একাউন্টে লগইন করে নিবেন। 

সেখান থেকে অ্যাকাউন্ট অপশনে চলে যাবেন। একাউন্ট অপশনে যাওয়ার পর পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করে দিবেন। পরবর্তীতে সেখানে Payoneer বা Skrill অর্থাৎ যার মাধ্যমে আপনি টাকা উত্তোলন করতে চাচ্ছেন সেটা সিলেক্ট করে দিবেন। তারপর আপনার অ্যাকাউন্টের ডিটেলস প্রদান করে সাবমিট পারনে ক্লিক করে দিবেন। 

এরপর কিছু সময়ের মধ্যেই আপনার Payoneer বা Skrill একাউন্টে আপনার অর্জিত অর্থ গুলো পাঠিয়ে দিবে ফ্রিল্যান্সার ডটকম।

Payoneer নাকি ডিরেক্ট ব্যাংক ডিপোজিট: কোন পদ্ধতিটি বেছে নেওয়া উচিত?

আপনি চাইলে যে কোন একটি পেমেন্ট অপশন বাছাই করে নিতে পারেন, আপনি চাইলে Payoneer কিংবা ব্যাংক ডিপোজিট যে কোন অপশন এ আপনার টাকা পেতে পারেন। কোন পদ্ধতির বেছে নিবেন এটা মূলত নির্ভর করে আপনার বিশ্বাস এবং প্রয়োজন এর উপর। 

আপনি যদি সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে অর্থ পেতে চান সে ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্ট বেছে নিবেন। আর আপনি যদি Payoneer বা Skrill এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে চান সেক্ষেত্রেও আপনি খুব সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। 

তবে আপনি যদি Payoneer বা Skrill ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনি আরো ভালো ফলাফল পাবেন। কেননা আপনি চাইলে সরাসরি পেয়ে Payoneer থেকে আপনার বিকাশ একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন। আর Payoneer একাউন্ট তৈরি করা খুবই সহজ যা আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি করে নিতে পারবেন। 

আর এর পাশাপাশি যখন আপনি ১০০ ডলার লেনদেন করবেন তখন Payoneer আপনাকে একটি ফ্রি মাস্টার কার্ড প্রোভাইড করবে যা আপনার অনেক কাজে দিবে। 

এক নজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল 

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা ওঠানোর জন্য বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ভালো হবে?

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা ওঠানোর জন্য বাংলাদেশে সবথেকে ভালো ব্যাংক হল ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এবং ব্যাংক এশিয়া।

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি?

ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হল Payoneer।

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কোনটি?

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হল Upwork।

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

অনলাইন রিপোর্ট অনুযায়ী একজন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার মাসে বাংলাদেশী টাকা হিসেবে 50 হাজার থেকে 5 লক্ষ টাকা আয় করে থাকে।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তাদের আয়ের উপর শতকরা কত শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে?

বাংলাদেশ সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তাদের আয়ের উপর ৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে freelancer.com-এর টাকা তোলার উপায় কী?

বাংলাদেশ থেকে freelancer.com-এর টাকা তোলার সবচেয়ে সহজ উপায় হল Payonner বা skrill।

উপসংহার

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এই আর্টিকেলে ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি, বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কোনটি, ফ্রিল্যান্সিং-এর টাকা ওঠানোর জন্য বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ভালো হবে সহ আরো অন্য কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

 বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যম payoneer এইটা নিয়ে আমরা অনেকেই জানি। তবে এর পাশাপাশি স্ক্রিল সহ আরো অনেক পেমেন্ট অপশন রয়েছে যেগুলো থেকেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকা পাওয়া সম্ভব। আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি কিছু শিখতে পেরেছেন এবং জানতে পেরেছেন। যদি এখন আপনাদের এই বিষয়ে কোন প্রবলেম কিংবা প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

 আমরা ইনশাল্লাহ দীর্ঘ সময়ের মধ্যেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কিংবা মতামতের রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব। এই পর্যন্তই সবাই আসসালামু আলাইকুম এবং পরবর্তী আর্টিকেলগুলো করার অনুরোধ রইলো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url