অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ

 পূর্বের আর্টিকেল আমি বলেছিলাম যে আমরা একটি ব্লগিং সিরিজ তৈরি করতেছি, 

আমি সিরিজটির নাম দিয়েছিলাম: "বাংলা আর্টিকেল নাকি ইংরেজি আর্টিকেল, অ্যাফিলিয়েট নাকি এড;সেন্স"

আজকে সেই সিরিজের 2 Part

প্রথম পার্ট এর মধ্যে আমরা আলোচনা করেছিলাম।

"বাংলা আর্টিকেল বনাম ইংরেজি আর্টিকেল এর পার্থক্য এড;সেন্স ইনকাম এর ক্ষেত্রে।"

আর আজকের পার্ট এর নাম হবে:

" অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ"

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ

হয়তোবা পার্টের নাম দেখে বুঝতে পারতেছেন যে আজকের পার্ট এ কিছুটা পার্থক্য নিয়ে সম্পর্কে ও ভবিষ্যৎ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

হ্যাঁ অবশ্যই আজকে পার্ট এ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আমাদের মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ জনই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে জানি, তবে যারা এই বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না তাদের জন্য সংক্ষেপে বলতেছি। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি

এফিলিয়েট মার্কেটিং হল এক ধরনের মার্কেটিং কৌশল বা টেকনিক যেখানে একজন এফিলিয়েট মার্কেটার অন্য কোন কোম্পানির পণ্য বা সার্ভিস বিক্রয় করার মাধ্যমে ইনকাম জেনারেট করে থাকে।  

এখন যদি আমি সহজ বাংলা ভাষায় আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি তাহলে সংজ্ঞাটা কিছুটা এরকম দেখাবে।

ধরেন, কোন একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস থেকে কোন একটি পণ্য বেছে নিলেন তারপর সেটা কে ভিন্ন মাধ্যমে বা টেকনিকের সাহায্যে শেয়ার করার মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে খুঁজতে লাগলেন, যখন আপনি আপনার লিংক এর মাধ্যমে কোন একজন ক্রেতাকে কোন একটি প্রোডাক্ট সেই মার্কেটপ্লেস থেকে ক্রয় করে দিতে পারবেন তখন সেই মার্কেটপ্লেস আপনাকে সেই বিক্রয়ের উপর কিছু একটা কমিশন দিবে আর এই সম্পূর্ণ প্রসেস কে এফিলিয়েট মার্কেটিং হিসেবে পরিগণিত হবে।

আচ্ছা এখানে অনেক সুবিধা অসুবিধা রয়েছে যা আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে আলোচনা করব।

তবে এই ধরনের মার্কেটিং করতে গেলে আপনার নিজস্ব কোন প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস এর প্রয়োজন হবে না আপনি অন্যের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সেল করেই ইনকাম করতে পারবেন।

এখন আসি মূল কথায়, 

এই পর্বের মূল কথা

বর্তমানে বিশ্বে বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটে ১৭ বিলিয়ন ডলার (ক্যান ইউ ইমেজিন) এর বাজার রয়েছে

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ
আর শুধুমাত্র যুক্তরাষ্টায় রয়েছে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের বাজার।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ
এটা জাস্ট এক বছরের হিসাব, আর business wire এর মত অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যেই এফিলিয়েট মার্কেটিং বাজারে গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় 36 বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ বর্তমানে যে মার্কেট রয়েছে তা আর পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রায় দ্বিগুনের বেশি পরিমাণে অগ্রগতি করবে। 

বাংলাদেশে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাজার

আচ্ছা এখানে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর দিক থেকে কততম তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে Statista এর তথ্য অনুসারে এবং গুগল বার্ড এর মাধ্যমে এইটা ক্লিয়ার হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ

২০৩০ সালের মধ্যেই ১০০ মিলিয়ন থেকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পর্যন্ত এক্সপেন্ড হতে পারে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান আবার অনুমান করেছে ২০২৭ সালে বাংলাদেশের এই সেক্টরে ২০ মিলিয়ন ডলার উত্তীর্ণ হবে। যে আমার কাছে তুলনামূলক অনেক কম মনে হয়েছে কেননা বাংলাদেশ আগের তুলনায় আরো বেশি পরিমাণে অনলাইন ভিত্তি করছে এবং অনলাইন কেনাকাটার দিকে মানুষ বেশি মনোযোগী হচ্ছে। তবে আমরা একটি অনুমান করতে পারি, আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ও অফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে। 

কেন এই পরিসংখ্যান

আচ্ছা এতক্ষন হয়তোবা মনে করতেছেন যে এত বড় বড় বিষয় ও পরিসংখ্যান গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতেছি কেন, 

আপনারা যদি ওপরের পরিসংখ্যান গুলো জাস্ট একটু মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে ইন ফিউচার এফিলিয়েট মার্কেটিং বাংলাদেশে বিরাট একটি পজিশন দখল করবে। 

আচ্ছা এখানে আরেকটি পরিসংখ্যান দিলে হয়তোবা আরো বুঝতে পারবেন, 

২০১৯ সালের দিকে যে ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজিং এর ট্রেডিশন ( including Google Ad;Sense and other display advertising services) যে গতিতে লাফ দিয়েছিল ঠিক ২০২২ সালের পর থেকে সেই গতিতেই নিচের দিকে নামা শুরু করেছে। 

তবে অ্যাড স্পেন্ডিং অর্থাৎ অ্যাড এর প্রতি টাকা ব্যয় করার প্রবণতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে যথাযথ কাস্টমার না পাওয়ার কারণে অনেকজন এই সিস্টেম থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। কেন এই বিষয়টা শেষের দিকে আলোচনা করব?

আর ধারণা করা হচ্ছে যে খুব শীঘ্রই হয়তো বা 2030 সালের পর এই ট্রাডিশনাল অ্যাডভার্টাইজিং সিস্টেম খুব একটা কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে না। গ্রাফ পিকচার মধ্যে রয়েছে দেখে নিতে পারেন। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ

কিন্তু এখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখি। 

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি টাকা স্পেন্ড করতেছে তাদের ব্যবসার জন্য। যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২৯ সালের মধ্যে এই হাতে সবথেকে বেশি বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সুতরাং এখন যারা আপনারা ব্লগিং করতেছেন গুগল এড;সেন্স এর আশায় তারা হয়তো বা একসময় আপনার অর্জিত সব কিছু হারিয়ে ফেলবেন। যদি এখন থেকেই ইনকামের ডিফল্ট কোন অপশন খুঁজে না নিতে পারেন। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বৃদ্ধির কারণ

ট্রেডিশনাল অ্যাডভার্টাইজিং সিস্টেমের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করতেছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। 

এখন কেন প্রথমেই বলেছিলাম যে ডিসপ্লে এডভারটাইজিং এর পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং অ্যাফিকেট মার্কেটিং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে.. এই প্রশ্নের উত্তরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

১. ডিসপ্লে এডভারটাইসিং মূলত একটি লার্জ অডিয়েন্স কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়। যেখানে বেশিরভাগ জন এই বিষয়গুলোতে ইন্টারেস্টেড থাকে না (তবে গুগলের সার্চ বাদ দিয়ে কিন্তু কেন তা পরবর্তী কোন একদিন আলোচনা করব) । যার কারণে অনেকজন ক্লিক করে কিংবা ওয়েবসাইট ঘুরে আসে কিন্তু তাদের সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্ট ক্রয় করা সম্ভব না খুবই কম থাকে। যার ফলে অনেক কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ড প্রমোশন করতে পারলেও তাদের বিক্রয় খুব একটা বাড়াতে পারে না। 

২. কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি যত ক্লিকেই করুন সেখানে কোন লাভ নেই যতক্ষণ পর্যন্ত অডিয়েন্স রা ক্রয় না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার কমিশন পাবেন না। সুতরাং এখানে একটু একপ্রকার নিশ্চিতভাবে কোম্পানির সেল জেনারেট হবে। যা এডভাটাইজিং সিস্টেমের থেকে বেশি স্টাবল। 

আচ্ছা আপনি একজন নিজেকেই একটি বিজনেসের মালিক মনে করুন, এখন নিজেকে কোন সেক্টরটাতে বেশি গুরুত্ব দিবেন তা নিজেই ভেবে দেখুন এবং কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আপনি হলে কোন অপশনটাকে বেশি প্রাধান্য দিবেন।

আচ্ছা উপরে শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম এখন এরকম আরো অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যার কারণে এফিলিয়েট মার্কেটিং বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আচ্ছা এখানে আরেকটি কারণ না বলেই পারতেছি না।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুসারে এবং সার্চ ইঞ্জিন ল্যান্ড এর তথ্য অনুসারে গুগল অ্যাডভার্টাইজিং সিস্টেমের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার লস হয়েছে অ্যাডভার্টাইজারদের শুধুমাত্র এড;সেন্স লোডিং বা ফ্রড ক্লিক এর মাধ্যমে। নাম্বারটা কত বড় হয়তোবা আপনারা বুঝতে পারতেছেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ

মূলত এই ধরনের কারণ গুলোর কারণে গুগল এবং অন্যান্য এডভারটাইজিং সিস্টেমের প্রতি এডভার্টাইসারদের বিশ্বাস এবং আস্থা কমে আসতেছে। 

মূলত এটাও একটি বড় কারণ অ্যাডভার্টাইজিং সিস্টেমে ধস খাওয়ার ক্ষেত্রে।

বাইরে দেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয় হওয়ার কারণ

আর এই ক্ষেত্রে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পূর্ণ নিরাপদে একটি স্থান বিজনেস মালিকদের কাছে।

আর যারা রিয়েলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এবং ভালো কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে এই অনলাইন সেক্টরে তাদের কাছে এফিলিয়েট মার্কেটিং অবশ্যই জনপ্রিয়।

বিশেষ করে বাংলাদেশ পাকিস্তান এবং ভারত বাদ দিয়ে অন্যান্য সকল দেশি প্রায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর দিকে বেশি মনোযোগী ইনকাম জেনারেট করার জন্য!

এক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা পেয়েছে কেন?

কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা পিছিয়ে কেন তা হয়তোবা আপনারা বুঝতে পারতেছেন আমাকে বলতে লাগবেনা তবু আমি জাস্ট আমার মতামত টুকু বলতেছি।

বাঙালিরা মূলত সব থেকে লোভী জাতি এবং তারা কোনো প্রকার কাজ ছাড়া ইনকাম করতে চায় এবং খাটনি করতে তাদের এলার্জি আছে। আর ধৈর্যের পরিমাণ নেই বললেই চলে।

যার কারণে অনেকজন শুরু করতে চাইলেও ঠিকমতো কাজ করতে পারে না শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিতে হয়।

আচ্ছা এই বিষয়ে আমরা পরবর্তী পার্টগুলোতে আরো সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তবে একটা কথাই মাথায় রাখবেন "অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইজ বেটার দেন google এড;সেন্স অল টাইম"।

শেষ কথা

আচ্ছা লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেছে আর অতিরিক্ত লিখতে চাচ্ছি না যেহেতু এটি সিরিজ এর পর্ব আকারে লিখতেছি সেক্ষেত্রে এত বড় লেখা উচিত ছিল না। তবে আপনার কাছে সঠিক ইনফরমেশন না থাকলে পরবর্তী পর্বগুলোতে অনেক কনফিউশন আসতে পারে যার কারণে এখানে ক্লিয়ার করে দিলাম যেন পরবর্তীতে আপনাদের পরবর্তী বিষয়গুলো বুঝতে সুবিধা হয়।

তবে আজকের এই পর্বটা কেমন লেগেছে তা বলতে অবশ্যই ভুলবেন না। আরে কে কে এই সম্পূর্ণ লেখাটা করেছেন তারা অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। কেননা আপনারাই তো আমার অনুপ্রেরণা। 

তো এই বিষয়ে যদি আর কোন মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই করবেন। আর কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ইনফরমেশন পিকচারের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে সেগুলো দেখে নিতে পারেন। 

আর আপনারা যদি চান তাহলে পরবর্তীতে আরো বিশেষ কিছু পর্ব যুক্ত করা যাবে সেক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য লাগবে। 

তো আজকের এই পর্ব এই পর্যন্তই সবাইকে আসসালামু আলাইকুম।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url