বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা নেই কেন?

 সবাইকে আসসালামু আলাইকুম,

আমরা একটি ব্লগিং সিরিজ তৈরি করেছিলাম হয়তোবা আপনাদের অনেক জনের মনে আছে। আমরা মূলত সিরিজটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করার চেষ্টা করছিলাম। আর আমাদের ব্লগিং সিরিজটির নাম ছিল- "বাংলা আর্টিকেল নাকি ইংরেজি আর্টিকেল, অ্যাফিলিয়েট নাকি এড;সেন্স।"

ইতিমধ্যে আমরা ব্লগিং সিরিজের দুইটি পার্ট শেষ করে ফেলেছি। 

প্রথম পার্টটির নাম ছিল: বাংলা আর্টিকেল বনাম ইংরেজি আর্টিকেল এর পার্থক্য এড;সেন্স ইনকাম এর ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয় পার্টটির নাম ছিল: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং গুগল এড;সেন্সের এর মাঝে পার্থক্য এবং ভবিষ্যৎ।

আপনারা যারা এখনো প্রথম দুইটি পার্ট পড়েননি তারা অবশ্যই প্রথম দুইটি পার্ট পড়ে আসবেন তাহলে আপনাদের আজকের পার্টটি বুঝতে অনেক সুবিধা হবে।

আজকে আমরা আলোচনা করব আমাদের তৃতীয় পার্ট অর্থাৎ বাংলাদেশের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা নেই কেন? 

বাংলাদেশের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা নেই কেন

এই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে। 

সুতরাং আপনাদের মধ্যে যারা এই বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করবেন। 

তাহলে চলুন introduction প্যারাগ্রাফকে আর বৃদ্ধি না করে আমাদের মূল আর্টিকেলে ফিরে আসি।

বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ডাউন পয়েন্ট কোথায়?

বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয় নয় তার অনেকগুলো কারণ রয়েছে।  বিশেষ করে বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে ব্লগাররা খুব একটা ভালো সচেতন নয় কিংবা এই সম্পর্কে তাদের খুব একটা ধারণা নেই। 

গুগল অ্যাড*সেন্স সম্পর্কে যেভাবে ব্লগাররা খুব সহজেই ভালোভাবে বিস্তারিত ধারণা পায়, অ্যাফিলিয়েট  মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

মূলত আমাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই এর পাশাপাশি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং রিলেটেড দক্ষতা এবং যোগ্যতা আমরা ঠিকমতো অর্জন করতে পারতেছি না। 

এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি সময় সাপেক্ষধীন ইনকাম সোর্স অর্থাৎ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করতে হলে অবশ্যই দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়। 

আর এখানে আরেকটি সব থেকে বড় ডাউনফল হল বাংলাদেশী পর্যাপ্ত পরিমাণে এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস নেই। যেখান থেকে বাঙালিরা খুব সহজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারবে। 

এর পাশাপাশি বাঙালিরা সবথেকে অলস এবং কর্ম বিমুখ জাতি। কেননা তারা অল্প না করতেই তাদের হাল ছেড়ে দেয় এবং অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ে। 

যার কারণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ কেউ সহজে টিকে থাকতে পারে না। 

নিচে আমরা প্রত্যেকটি বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করব যেন আমাদের কোনো কিছু বুঝতে বাকি না থাকে, বাংলাদেশের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা নেই কেন? 

বাংলাদেশের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয় না হওয়ার কারণ

বাংলাদেশ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুধু একটা জনপ্রিয় না হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এই কারণগুলোর কারণেই মূলত বাংলাদেশী ব্লগাররা সহজে এফিলিয়েট মার্কেটিং এ যুক্ত হতে পারেনা। 

তাহলে চলুন জেনে নেই কোন কারণগুলোর কারণে বাংলাদেশে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা নেই।

১. পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা

বাংলাদেশ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয় না থাকার সবথেকে বড় ও অন্যতম কারণ হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে জ্ঞান এবং সচেতনতা না থাকা। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি জটিল বিষয়। এর সঠিক জ্ঞান না থাকলে এতে সফল হওয়া কঠিন। বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে পর্যাপ্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। 

ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। যার কারণে এফিলিয়েট মার্কেটিং কে অনেক জন না বুঝেই ইগনোর করে। 

তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে অন্যদেরকে জানাচ্ছে এবং অন্যদেরকে আগ্রহী করে তুলতেছে হয়তো আর পরবর্তীতে এর ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। 

২. সঠিক গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা থাকা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য সঠিক গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা থাকা অনেক জরুরি। বাংলাদেশে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা নেই। 

এছাড়াও বাংলাদেশের সব বিষয়ে ভালো মানের ইউটিউব চ্যানেল থাকলেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কিত ভাল কোন বাংলা ইউটিউব চ্যানেল নেই। যার ফলে যারা অন্য ভাষা বোঝে না তাদের পক্ষে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর দিকনির্দেশনা বা গাইডলাইন পাওয়াটা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। 

আর বর্তমানে অনেক কোর্স রয়েছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে যেগুলো জাস্ট টাকা আয় করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে কোন কিছু শেখা কিংবা জানার সম্ভব নয় যা দ্বারা সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হওয়া সম্ভব। 

ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সঠিকভাবে শুরু করতে পারে না। আর শুরু করতে পারলেও খুব অল্পতেই হার মেনে যায়। 

আর অনেক জনের ইচ্ছা প্রবল থাকার পরেও তারা সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ার কারণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে যুক্ত হতে চায় না। 

৩. পর্যাপ্ত এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস না থাকা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস থাকা অনেক বেশি ইম্পোর্টেন্ট। বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। 

ফলে অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহী হলেও শুরু করতে পারে না। আর যথেষ্ট পরিমাণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস না থাকার কারণে ব্লগাররা সহজেই তাদের পছন্দমত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস এর সাথে যুক্ত হতে পারেনা। 

যখন অ্যাফিলিয়েট  মার্কেটপ্লেসের অনেকগুলো বিকল্প থাকে তখন সেই পছন্দের এবং যেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস থেকে বেশি ইনকাম করা সম্ভব সেখানেই কাজ করা উত্তম। 

যেহেতু বাংলাদেশে পর্যাপ্ত মার্কেটপ্লেস নেই সে ক্ষেত্রে ব্লগারদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সেই দুই-একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস এর সাথে যুক্ত হতে হয়। তাছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে ইনকামের সুবিধা না থাকার কারণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হতে পারেনা।  

বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়বে। 

কারণ, এতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য আরও বেশি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। 

এছাড়াও, ভালোমানের প্রোডাক্ট এবং বেশি কমিশনের পরিমাণ অফার করা হলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের আগ্রহ বাড়বে।

৪. বাংলাদেশি মার্কেটপ্লেস এর খারাপ রেপুটেশন

বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম একটি সবথেকে বড় কারণ হলো বাংলাদেশি এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসের খারাপ রেপুটেশন। 

বাংলাদেশী কয়েক বছর আগে যে ই-কমার্স প্রতারণা সংগঠিত হয়েছিল তা হয়তো সবার জানা আছে। 

কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি সহ প্রায় ৬৫% এর অধিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রতারণার সাথে যুক্ত বলে জানানো হয়। মূলত এখান থেকে এফিলিয়েট মার্কেটারদের এক ধরনের খারাপ মন মানসিকতা যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলোর জন্য। 

এছাড়া বাংলাদেশী অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসগুলোতে কমিশনের পরিমাণ অনেক কম, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ভালো নয় এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। 

ফলে অনেকেই এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা যখন তাদের প্রোডাক্ট সেল করে দেয় সেক্ষেত্রে তাদের পেমেন্ট পাওয়ার সময় অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয় অনেক সময় অনেক মার্কেটপ্লেস যথাযথ ইনকাম তাদেরকে প্রদান করে না। 

মূলত এসব কারণে সাধারণ ব্লগাররা বাংলাদেশের মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ খুব একটা আগ্রহী নয়।

৫. ভালোভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে না পারা

আচ্ছা এতক্ষণ আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরী এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। এখন যদি আমরা একটু ইন্টার্নেশনাল মার্কেটপ্লেস গুলোর দিকে লক্ষ্য করি সে ক্ষেত্রে আমাদের সবথেকে বড় এবং জনপ্রিয় না থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো ভালোভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে না পারা। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য ভালোভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারা অনেক ইম্পরট্যান্ট একটি বিষয়। 

কারণ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদেরকে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস মার্কেটিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট, ইমেল, প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটি, রিভিউ আর্টিকেল তৈরি করতে হয়। 

আর এই কন্টেন্টগুলো সব ইংরেজিতে লেখা হয়। তাই, ভালোভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে না পারলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। 

বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস এ কাজ করতে আসলে। আর যেহেতু বেশিরভাগ জন ভালোভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারে না সেই জন্য তাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার খুব একটা জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায় না। 

৬. ইনকামের সুনির্দিষ্ট গ্যারান্টি নেই

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ইনকামের কোনো সুনির্দিষ্ট গ্যারান্টি নেই। কারণ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের ইনকাম নির্ভর করে পাবলিশারদের মার্কেটিং দক্ষতার উপর।

যে যত ভালো হবে তাদের প্রোডাক্টের প্রমোশন এবং মার্কেটিং করতে পারবে তার ইনকামের সম্ভাবনা তত বেশি। যদি একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার খুব ভালো ভাবে তার প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং করতে পারে তাহলে তার ইনকাম বেশি হবে। 

অন্যদিকে, যদি একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার ভালো মার্কেটিং করতে না পারে তবে তার ইনকাম কম হবে। 

মূলত একজন এফিলিয়েট মার্কেটার এর এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধির সাথে সাথে তুলনামূলক ভাবে তার ইনকাম বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আর এই মার্কেটপ্লেসে যদি আপনি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারেন এবং সঠিক কনটেন্ট যদি আপনার অডিয়েন্সকে যদি আগ্রহী করে না। সেক্ষেত্রে এই মার্কেটপ্লেসে সহজেই সফল হওয়া সম্ভব নয়। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সফল হতে হলে অনেক পরিশ্রম এবং ধৈর্য লাগে।

৭. বাংলাদেশীদের অনলাইনে কেনাকাটার আগ্রহ না থাকা

মূলত বাংলাদেশিদের মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটা থেকে অফলাইন বা সরাসরি মার্কেট থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস ক্রয় করার দিকে বেশি মনোযোগী। 

যার ফলে তারা অনলাইনে খুব একটা প্রোডাক্ট ক্রয় করতে চায়না এবং করলেও খুব একটা বেশি করে না। 

অনলাইন এ কেনাকাটার বিষয়ে অনেকজন সচেতন নয়, তারা বিভিন্ন কারণে অনলাইন থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে চায়। 

অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেক জনের মাথায় অনলাইনে কেনাকাটা করলে টাকা লস খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এছাড়াও অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জনের প্রোডাক্টের কোয়ালিটির নিয়ে সন্ধিহান থাকে। 

কেননা ট্রেডিশনাল বাজারে যখন একটি প্রোডাক্ট ক্রয় করা হয় তখন সবকিছু দেখে শুনে এবং ভালোভাবে পাওয়া পর্যবেক্ষণ করে প্রোডাক্ট ক্রয় করা হয়। 

কিন্তু অনলাইনে যখন কোন একটি প্রোডাক্ট কিনতে যায় তখন তারা সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে খুব একটা জানতে পারে না। কিংবা বাস্তবে অনুভব করতে পারে না যার কারণে তারা অনলাইনে কেনাকাটা থেকে অফলাইনে কেনাকাটায় বেশি মনোযোগী। 

আর বাংলাদেশী মার্কেটপ্লেস গুলোর প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটির উপর অনেক খারাপ রেপুটেশন রয়েছে। 

এছাড়াও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে তারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে যারা ঢাকা অঞ্চলের বাইরে বসবাস করে তারা অনলাইন ডেলিভারি নিয়ে সব থেকে বেশি সমস্যার মধ্যে থাকে। 

এছাড়া অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ এক্ষেত্রে আরো বড় ভোগান্তির সৃষ্টি করে। মূলত এই কারণগুলোর কারণে বাংলাদেশি সাধারণ জনগণের মাঝে অনলাইন থেকে কেনাকাটার খুব একটা আগ্রহ নেই। 

যার ফলে ব্লগার রাও খুব একটা প্রমোশন করে না কেননা তারা জানে যে অনলাইনে খুব একটা প্রোডাক্ট সেল করা বর্তমান সময়ে পসিবল নয়। 

যার কারনে সাধারণ এফিলিয়েট মার্কেটাররাও এই বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না যার কারণে বাংলাদেশ এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তা এখনো খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি।

৮. সঠিক উপায়ে মার্কেটিং না করা

বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সঠিকভাবে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারে না। বিশেষ করে তারা কোন প্রকার পেইড প্রমোশনের সাথে যুক্ত হতে চায় না। 

সব সময় ফ্রিতে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে চায়, আর ফ্রিতে খুব একটা বড় অডিয়েন্স পাওয়া পসিবল নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। 

যার কারণে তারা সঠিক অডিয়েন্স না পাওয়ার কারণে খুব অল্পতেই হতাশার মধ্যে ভোগে। এক্ষেত্রে যদি সঠিকভাবে প্রমোশন করা হতো তাহলে হয়তো বা তাদের ইনকাম এবং পসিবিলিটি আরো বৃদ্ধি পেত। 

আর বাংলাদেশী ব্লগারদের শুধুমাত্র কনটেন্ট এর উপর ডিপেন্ড করে মার্কেটিং করা খুব একটা বুদ্ধিসম্মত কাজ বলে অনেকজনই মনে করেন না। 

যার কারণে সঠিকভাবে প্রমোশন করতে না পারার কারণে অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার অল্পতেই হার মেনে নেয়। 

যার কারণে তারা নিজেও এফিলিয়েট মার্কেটিং কে পছন্দ করেনা এবং অন্যদেরকেও এই বিষয়ে অনাগ্রহী করে তোলে।

যার কারণে বাংলাদেশীদের মধ্যে মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায় না।

৯. অধিক কম্পিটিশন এবং অল্প প্রোডাক্ট

বাংলাদেশী অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইট গুলোতে খুবই অল্প পরিমাণে প্রোডাক্ট দেখা যায়, আর সেই প্রোডাক্টগুলো লক্ষ্য করা যায় সে প্রোডাক্ট গুলোর কম্পিটিশন অনেক বেশি। 

বাংলাদেশে যে কয়েকটি জনপ্রিয় এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস রয়েছে তার অন্যতম হলো দারাজ। কিন্তু দারাজের প্রোডাক্টগুলো অনলাইনে কিংবা অফলাইনে ব্যাপক আকারে বিভিন্ন এজেন্সি প্রমোট করে থাকে। 

যেহেতু বাংলাদেশী ইউজারদের মধ্যে ক্রয় করার সম্ভাবনা অনেক কম এবং কম্পিটিশন সামান্য হলেও বেশি। সেজন্য খুব একটা প্রোডাক্ট সেল করা হয় না। 

যার কারণে তারা কোন প্রকার ইনকাম করতে পারেনা। মূলত এই কারণগুলোর কারনেও বাংলাদেশি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং খুব একটা জনপ্রিয় নয়।

১০. অল্প কমিশন

প্রথমত বাংলাদেশী খুব অল্পজনের কাছেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে জ্ঞান এবং গাইডলাইন রয়েছে। আর মার্কেটপ্লেসগুলো খুব অল্প এবং খুব একটা ভালো রেপুটেশন নেই। 

আরো উপরে যে বিষয়গুলো নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম সব বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যদি কেউ প্রোডাক্ট সেল করেও থাকে সেক্ষেত্রেও তাদের কমিশন অনেক কম। 

অর্থাৎ আপনি যদি একটি ১০০০ টাকার একটি প্রোডাক্ট সেল করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইনকামের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। যা তুলনামূলক অনেক অনেক কম। যেহেতু প্রোডাক্টের কমিশন হার অনেক কম সেক্ষেত্রে তাদের ইনকাম করারও সম্ভাবনা অনেক কম হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে অনেক জনের ইচ্ছায় এবং ধৈর্য থাকলেও ইনকাম কম হওয়ার কারণে এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে তারা যুক্ত হতে চায় না। 

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে তবে আমার জানামতে এই ১০টি কারণেই বাংলাদেশে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে খুব একটা জনপ্রিয়তা নেই। 

বাংলাদেশ থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার ভবিষ্যৎ কেমন

ভেরিফাইড মার্কেটার রিসার্চ এর তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ মার্কেটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেই অনলাইন সেক্টর গুলো থেকে ইনকাম করা সম্ভাবনা রয়েছে তার সবার প্রথম অবস্থান করতেছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। 

চলুন জেনে নেই বাংলাদেশে এফিলিয়েট  মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কেন সম্ভাবনাময়!

১. দ্রুত গতিতে ই-কমার্স ওয়েবসাইট বৃদ্ধি: 

বিভিন্ন বেসরকারি তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টির মতো (লাইসেন্স কৃত)। কিন্তু ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা রিপোর্ট অনুসারে প্রায় ২৫০০ টির অধিক ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। এফ-কমার্স বিজনেস অর্থাৎ ফেসবুক পেজ কে কাজে লাগিয়ে বিজনেসের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছায়।

এখান থেকে আমাদের একটি বেশি ধারণা চলে আসে যে বাংলাদেশে পূর্বের তুলনায় অধিক আকারে ই-কমার্স ওয়েবসাইট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এখানে আরো বলে রাখা ভালো যে, বিবিসির তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালে সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের পরিধি ছিল মাত্র ৪৬০ কোটি টাকার যা ২০২০ সালে ১৬ হাজার কোটি টাকায় উত্তীর্ণ হয়। এছাড়াও ২০২৫ সালের মধ্যে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার উপরে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হয়।

আর এখানেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা যতই ই-কমার্স ওয়েবসাইট বৃদ্ধি পাবে তখন মার্কেটারদের কাছে প্রোডাক্টের বিকল্প থাকবে এবং মার্কেটপ্লেস এর ও বিকল্প থাকবে যা তাদের ইনকাম করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। 

২. ইন্টারনেট এবং মোবাইল ব্যবহারকারী সংখ্যা বৃদ্ধি: 

বাংলাদেশের বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪%, যা সংখ্যায় দাঁড়ায় প্রায় ১৩ কোটির কাছাকাছি। 

আর বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটির অধিক। যা পূর্বের তুলনা প্রায় দ্বিগুণ গতিতে বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। 

বাংলাদেশে বর্তমানে যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর পাশাপাশি মোবাইল ব্যবহারকারী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের একটি বিশাল সুযোগ তৈরি হচ্ছে। 

কেননা যত বেশি ইউজার অনলাইন এ থাকবে এবং মোবাইল ব্যবহার করবে তত অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। 

আর যেহেতু পূর্বের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে হয়তো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিজনেস গুলো আরো প্রবল আকার ধারণ করবে।

 আর যখন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনলাইন থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করার প্রতি অভ্যস্ত হয়ে উঠবে তখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা খুব সহজ হয়ে উঠবে। 

৩. প্রযুক্তি প্রিয় তরুণ যুবক: 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের প্রায় ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটির আশেপাশে। 

যেহেতু বাংলাদেশের তরুন এবং যুবকদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। যারা সবাই প্রায় প্রযুক্তির সাথে নিয়মিত পরিচিত এবং বর্তমান দুনিয়ার সাথে তারা তাল মিলিয়ে চলতে চায়। 

এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বর্তমানে তরুণ যুবক যারা অনলাইনে সব সময় থাকে তাদের অনলাইনে কেনাকাটার চাহিদা অনেক বেশি। 

কেননা অন্যান্য দেশ যখন অনলাইন মার্কেটিংয়ের দিকে বেশি মনোযোগী এবং অনলাইনে সবসময় একটিভ থাকে ঠিক একই ভাবেই বাংলাদেশী রাও অন্যান্য দেশের মত একই পথে চলতে যাচ্ছি। 

আর যেহেতু বাংলাদেশে বর্তমানে ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো এবং এফ-কমার্স বিজনেস গুলো ব্যাপক আকারে বিস্তার হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারাও অনলাইন কেনাকাটার দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। 

কেননা অনলাইনে তাদের পছন্দমত তারা প্রোডাক্ট পছন্দ করে ক্রয় করতে পাচ্ছে। আর এখানেই এফিলিয়েট মার্কেটারদের সুযোগ যে তারা এই তরুণ যুবকদেরকে টার্গেট করে তাদের অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট সেল করতে পারবে।

৪. সোশ্যাল মিডিয়া মুখী জনগণ: 

Statista এর তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের প্রায় ৬৭% ইন্টারনেট ব্যবহার করে সব সময় সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে একটিভ থাকে। 

অর্থাৎ যারা বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৬৭ জন বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময় এক্টিভ থাকে। 

আর বেশিরভাগ যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইনকাম করা সম্ভব। 

যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা সঠিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মার্কেটিং করতে পারে তাহলে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার এই একটিভ মানুষদের কাছে প্রোডাক্ট সেল করে একটি হিউজ অ্যামাউন্ট এর ইনকাম করতে পারবে। 

আর বর্তমানে এক্টিভ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই ইনকাম করার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে।

৬. সফল এফিলিয়েট মার্কেটার:

 বর্তমানে অনলাইনে অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা খুব সহজেই তাদের টেকনিক কাজে লাগিয়ে সফল হচ্ছে। (উদাহরণস্বরূপ যেমন আমি) 

যা তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করতেছে যেখান থেকে অনেক নতুন ব্লগার এবং ইউটিউবার রা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর দিকে আগ্রহী হচ্ছে। 

বাংলাদেশের যত সফল এফিলিয়েট মার্কেটার উত্থান হবে ততো বাংলাদেশের মানুষেরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর দিকে অনুপ্রেরণা পাবে। 

কেননা মানুষ অন্যদেরকে ফলো করতে বেশি পছন্দ করে বিশেষ করে বাঙালি জাতি। 

যখন অন্যরা কেউ সফল হবে এবং তারা যখন তাদের সাকসেস স্টরি শেয়ার করবে তখনই অনেক জন এই কাজের প্রতি আগ্রহী হবে। 

যা নতুন নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার সৃষ্টিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। আর বাংলাদেশের যত এফিলিয়েট মার্কেটার বৃদ্ধি পাবে তত বিজনেসম্যানেরাও বেশি লাভ করবে। 

আর এই প্রক্রিয়া যখন চক্রাকারে ঘুরবে তখনই বাংলাদেশে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ উন্নত হবে। 

বাংলাদেশে এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য সবচেয়ে ভাল মার্কেট প্লেস কোনটি?

বাংলাদেশে বর্তমানে অনেকগুলো এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস রয়েছে। তবে সমস্ত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস বিশ্বাসযোগ্য এবং কাজ করার উপযুক্ত নয়। 

তবে বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেগুলোতে নিঃসন্দেহে এবং কোনো প্রকার প্রতারণা ছাড়াই ইনকাম করে আয় করতে পারবেন। 

বাংলাদেশে এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য সবচেয়ে ভাল কয়েকটি মার্কেটপ্লেস এর নাম নিচে দেয়া হল:

১. দারাজ এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

২. রকমারি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম (এই প্রোগ্রামের লিংক খুব বেশি জায়গা পাবেন না এই জন্য এখানে লিংক দিয়ে রেখেছি)

৩. ১০ মিনিট স্কুল অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

৪. ফুড পান্ডা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

৫. শিখো এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

৬. বহুব্রীহি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

৭. শপ আপ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

৮. এক্সন হোস্ট অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

৯. Hostever অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

১০. Shopz অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

এগুলো বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর অন্যতম। এছাড়া আরো অনেক অনেক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে। 

তবে আপনারা এমন এফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন যা অবশ্যই আপনাদের ওয়েবসাইটের সাথে মিল রয়েছে। 

আর অবশ্যই সমস্ত মার্কেটপ্লেসের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো পর্যবেক্ষণ করার পর এফিলিয়েট মার্কেটিং করা শুরু করে দিবেন। 

এগুলো বাংলাদেশের স্থানীয় এফিলিয়েট প্রোগ্রাম এছাড়াও আরো ইন্টারন্যাশনাল অনেকগুলো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে যেগুলো থেকেও আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করে দিতে পারেন। 

সফল এফিলিয়েট মার্কেটার হওয়ার রোড ম্যাপ

আপনি যদি একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে চান তাহলে আপনাকে অনেকগুলো গাইডলাইন মেনে চলতে হবে। 

তবে সমস্ত গাইডলাইন মেনে চলতে হবে তাও কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। আপনি চাইলে নিজের মতো করেও কাজ করতে পারবেন। 

তবে আপনি যখন একটি রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করবেন তখন আপনার কাজগুলো খুব সহজে এবং আরামদায়ক মনে হবে। 

আপনি যদি একজন সফল এফিলিয়েট মার্কেটার হতে চান তাহলে নিচের দেয়া গাইডলাইন গুলো সব সময় মনে রাখবেন:

১. এমন একটি নিস বা টপিক বেছে নিন যে সম্পর্কে আপনার জ্ঞান রয়েছে এবং যে সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে কনটেন্ট লিখতে পারবেন। 

অবশ্যই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আপনার টপিক বা নিস নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন। 

কেননা এফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হতে হলে নিস এর গুরুত্ব অনেক বেশি

২. একবার আপনার টপিক বা নিস নির্বাচন করা হয়ে গেলে পরবর্তীতে আপনার করণীয় হল একটি সঠিক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এ জয়েন হয়ে যাওয়া। 

এমন একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন যা অবশ্যই বিশ্বস্ত এবং আপনি যে বিষয়ে কাজ করেন সেই রিলেটেড হাই কোয়ালিটি প্রোডাক্ট সাপ্লাই করে। 

এতে করে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির হার বৃদ্ধি পাবে।

৩. হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট লেখা এবং এসইও করে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করানোর চেষ্টা করা। 

আপনি যদি হাই কোয়ালিটি ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট লিখতে পারেন তাহলে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

 আর আর্টিকেলগুলো কি এমন ভাবে লেখার চেষ্টা করবেন যেন সবাই তাদের প্রশ্নের উত্তর কনটেন্ট এর মধ্যেই পেয়ে যায় এবং সেটা যেন অবশ্যই ইনফরমেটিভ হয়।

৪. সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুলোতে আপনার প্রোডাক্টের লিংক প্রমোট করা। 

আপনি ইউটিউব কিংবা ফেসবুক এর মত সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে আপনারা অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক কিংবা আপনি যেই আর্টিকেল লিখেছেন সেই আর্টিকেলের লিংক শেয়ার করে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির সম্ভাবনা তৈরি করবেন। 

আপনি যত বেশি আপনার এফিলিয়েট লিংক প্রচার করবেন আপনার বিক্রির হার তত বৃদ্ধি পাবে এবং তত বেশি ইনকাম করতে পারবেন।

৫. নিয়মিত আপনার পারফরম্যান্স ট্র্যাক করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি কোন জায়গা গুলোতে বেশি ভালো ফলাফল পাচ্ছেন এবং কোন স্থানগুলোতে আপনি কোন প্রকার ফলাফল পাচ্ছেন না তার একটি সার্বিক ধারণা পেয়ে যাবেন। 

যেই স্থান থেকে আপনি বেশি প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন এবং কমিশন পাবেন সেই স্থানে বেশি প্রোডাক্ট প্রমোট করার চেষ্টা করবেন। 

এতে করে আরো বেশি পরিমাণে বিক্রয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা থেকে আপনি আরো বেশি পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন।

আপনি মূলত এই কয়েকটি স্টেপ সব সময় ফলো করার চেষ্টা করবেন তাহলেই দেখবেন আপনি কিছু সময় পর ইনকামে চলে এসেছেন। 

তবে কখনোই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে এসে হাল ছাড়বেন না বিশেষ করে কখনোই দুই থেকে তিন মাসের উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন না। 

একটি দীর্ঘ সময় ধরে এই মার্কেটে থাকার চেষ্টা করবেন তাহলেই আপনি সফল হতে পারবেন।

উপসংহার

আমাদের ব্লগিং সিরিজের আজকের এই পার্ট অনেক দীর্ঘ এবং অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের আমাদের টপিক ছিল বাংলাদেশ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা নেই কেন এই বিষয় সম্পর্কিত। 

তবে এই বিষয়ে রিলেটেড অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি হয়তো আপনাদের অনেক কাজে দিবে। 

তবে অনেকদিন পর আর্টিকেল লিখলাম কাজের চাপের কারণে অনেকদিন ধরে লেখা হচ্ছিল না। আর্টিকেলগুলো নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করবেন এবং ফলো করার চেষ্টা করবেন তাহলেই অনেক বিষয় বুঝতে এবং ক্লিয়ার হতে পারবেন। 

আর পূর্বের দুইটি পার্ট যার এখনো যারা পড়ে আসেননি তারা অবশ্যই পড়ে আসবেন। আর এই সংক্ষিপ্ত আর্টিকেলটি কেমন লাগলো সেটা জানাতে ভুলবেন না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url